ফরেক্স ট্রেডিং এর ইতিহাস

2
854
Forex History

Forex History- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর শেষ সময়ে, পুরো বিশ্বেই কিছু বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি হয়। পশ্চিমা দেশগুলো তখন বিশ্ব অর্থনীতিক ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং সেটির কাঠামো গত অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য একটি সিস্টেমের প্রচলন শুরু করেন।

এই সিস্টেমটি ‘Bretton Woods System’ নামে পরিচিত। এই চুক্তি তখন সোনার মূল্যের বিপরীতে আমেরিকান ডলার এর বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা হত। যার কারনে, অন্যান্য দেশের মুদ্রাগুলো, ডলার বিপরীতে নিজেদের মান এর অবমূল্যায়ন হতে থাকে।

প্রাথমিক পর্যায়ে, কিছু সময়ের জন্য এই ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতির বাজারকে কিছুটা গতিশীল করলেও পরবর্তীতে, অনান্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা বিকশিত হবার কারনে, সিস্টেমটি আর কাজ করে থাকেনা। কেননা, সেই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতির চাকা সচল করতে শুরু করে ফলশ্রুতিতে, এই চুক্তির ব্যবহার সিমিত হয়ে পরে এবং এক সময় বাতিল হয়ে যায়।

এরপর, ১৯৭১ সালের দিকে, এই Bretton Woods Agreement বাতিল হয়ে যায় এবং এর বিপরীতে নতুন একটি মুদ্রা মূল্যনির্ধারণ ব্যবস্থা চলে আসে। এখান থেকেই মুলত Forex History এর শুরু বলা যায়। কেননা এরপর থেকে সময়ের বিবর্তন এর মাধ্যমে আমরা বর্তমানে ট্রেডিং করার সুবিধা পাই।

যাই হোক,

নতুন এই মূল্যনির্ধারণ ব্যবস্থার প্রধান চরিত্র হিসাবে থেকে যায় United States । এই ব্যবস্থায়, কারেন্সি এর বিনিময় হার নির্ধারিত করা হয়, বাজারে এই কারেন্সির চাহিদা এবং যোগানের উপর ভিত্তি করে।

প্রথম দিকে, এই এক্সচেঞ্জ রেট এর সঠিক নির্ধারণ করা অনেক বেশী কষ্টকর ছিল, কিন্তু সময় পরিক্রমায় এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধনের ফলে এটি অনেকবেশী সহজ হয়ে উঠে।

১৯৯০ সালের দিকে, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধনের সময় (ধন্যবাদ Mr. Gore) ব্যাংকগুলো তাদের জন্য নিজ নিজ ট্রেডিং প্লাটফর্ম তৈরি করা শুরু করে।

এই প্লাটফর্মগুলো তখন চার্ট আকারে রিয়েল টাইম প্রাইস মুভমেন্ট, ক্লায়েন্টদের দেখাতে সক্ষম ছিল যাতে করে ক্লায়েন্ট নিজ থেকেই ট্রেড করতে পারে।

এরপর, কিছু সময় পরে অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেড করার জন্য প্রতিট্রেডারের জন্য একটি ট্রেডিং প্লাটফর্ম এর আবির্ভাব ঘটে। এই প্লাটফর্ম, “Retail Forex Brokers” নামে পরিচিত। এই ট্রেডিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে সবার জন্য ট্রেডিং কার্যাদি পরিচালনা করার আরও সহজ হয় এবং সেট সাথে ট্রেডিং সাইজ কিংবা লট এর আকারও কমিয়ে দেয়া হয়।

যেখানে, Interbank ট্রেড এর জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড লট হচ্ছে ১মিলিয়ন ইউনিট সেখানে, এই রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার- ক্লায়েন্টকে সর্বনিম্ন লটে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেমন, ১০০০ ইউনিট।

Retail Forex Brokers

প্রাথমিক অবস্থায়, যারা বড় আকারের বিনিয়োগ করতে সক্ষম হতেন শুধুমাত্র তারাই ফরেক্স ট্রেডিং এর সুবিধা পেতেন। এই বিনিয়োগ এর পরিমাণ ছিল প্রায় ২-৫ মিলিয়ন ডলার এর কাছাকাছি। তবে, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারের আসার মাধ্যমে এবং ইন্টারনেট সেবার মানের ব্যাপক উন্নয়ন সাধনের ফলে আমরা এখন খুব সহজেই এবং অপেক্ষাকৃত অনেক কম পরিমাণ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করতে পারি।

আমরা বর্তমানে যেই প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে ফরেক্স ট্রেড করি একে বলা হয় Retail Forex Brokers সিস্টেম। অর্থাৎ, এখন ফরেক্স ট্রেড করার জন্য আমাদের কোনও না কোন ব্রোকারের মাধ্যমে করতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটিও অনেক বেশী সহজ। যেকোনো একটি ব্রোকার খুঁজে, সেখানে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন, ভেরিফিকেশন, ফান্ড ডিপোজিট করে ঘরে বসেই ট্রেডিং সুবিধা পাওয়া যায়।

এই ব্রোকারগুলো মুলত দুই রকমের হয়ে থাকে-

  1. Market Makers, এর অর্থ হচ্ছে- এই ধরনের ব্রোকার কারেন্সি পেয়ারের Bid এবং Ask প্রাইস তৈরি করতে পারে। এবং অন্যটি হচ্ছে,
  2. Electronic Communication Networks (ECN), এরা ট্রেড করার জন্য কারেন্সি পেয়ারের প্রাইস, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং মাধ্যম থেকে গ্রহন করে থাকে।

Market Makers

একটি সহজ উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে বলছি। ধরুন, আপনি কোনও কাজে ফ্রান্সে গেলেন। এই দেশে লেনদেন করার জন্য, আপনাকে সেই দেশের কারেন্সি ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, আপনাকে EURO এক্সচেঞ্জ করে নিতে হবে লেনদেন করার জন্য। এর জন্য, আপনি ফ্রান্সের যেকোনো লোকাল কারেন্সি এক্সচেঞ্জ এর বুথ/দোকান থেকে ইউরো এক্সচেঞ্জ করে নিলেন।

এখন ধরুন, আপনার কাছে ডলার আছে। সুতরাং, ব্যাংক কিংবা মানি-এক্সচেঞ্জার আপনাকে ডলার এর বিপরীতে ইউরো এর যেই এক্সচেঞ্জ রেট দিবে আপনাকে সেই রেটেই কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে নিতে হবে। অর্থাৎ, বিনিময় করার জন্য আপনি ডলার তার কাছে বিক্রয় করে দিলেন এবং সেই ব্যাংক কিংবা এক্সচেঞ্জার আপনার কাছ থেকে ডলার কিনে নিল।

এখানে একটি শব্দ আপনার শুনবেন যার নাম হচ্ছে Spread। ধরুন, EUR/USD কারেন্সি পেয়ার ব্যাংক ক্রয়/Buy/Bid করে 1.2000 প্রাইসে এবং ব্যাংক সেটাকে বিক্রয়/Sell/Ask করে 1.2002 প্রাইসে। লক্ষ্য করুন, এই দুইটি প্রাইসের মধ্যে কিছু পরিমাণ পার্থক্য রয়েছে। ফরেক্সের ভাষায় এই পার্থক্যকে স্প্রেড বলা হয়। আর এটাই হচ্ছে ব্রোকারের প্রফিট। উপরের উদাহরন অনুযায়ী EUR/USD কারেন্সি পেয়ারে স্প্রেড হচ্ছে 0.0002 । আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মনে হচ্ছে না, লাভের পরিমাণতো অনেক কম! এখন এই চিন্তা করেন কয়েক কোটি লেনদেন হলে লাভের পরিমাণ কি পরিমাণ এর হতে পারে?

রিটেইল মার্কেট মেকাররা, আসলে একটি বড় সাইজের লটকে অনেকগুলো ছোট ছোট লটে ভেঙ্গে তাদের ক্লায়েন্টদেরকে প্রদান করে থাকে। এর জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন লটের কারেন্সি পেয়ারের প্রাইসও বিভিন্ন ভাবে সেট করে থাকে। যদি সহজ করে বলতে হয় তাহলে এই ব্রোকাররা বিভিন্ন লিকুইডিটি প্রোভাইডার এর থেকে, বড় লটে পাইকারি মুল্যে কারেন্সি পেয়ার ক্রয় করে, সেটিকে ছোট ছোট লট এর আকারের খুচরা মুল্যে, আমাদের মতন ট্রেডাররদের কাছে বিক্রয় করে।

এই ধরনের ব্রোকার যদি না থাকতো তাহলে আমরা (যাদের ট্রেডিং বিনিয়োগ এর পরিমাণ অল্প) কখনই হয়তোবা ফরেক্স ট্রেড করতে পারতাম না। তাই, এদের অনেক বেশী ধন্যবাদ।

Electronic Communications Network

এই ধরনের ব্রোকাররা, ক্লায়েন্ট এর কারেন্সি পেয়ারের বাই/সেল এন্ট্রিকে একটি নির্দিষ্ট প্রাইসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করে থাকে। এই নির্দিষ্ট প্রাইস, ব্রোকাররা বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ECN নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এই ধরনের ট্রেডার এর কাছ থেকে নিয়ে আসে।

যখন কোনও কারেন্সি পেয়ারে একটি বাই কিংবা একটি সেল এন্ট্রি কোট হয় তখন এই ব্রোকার, এর সাথে মিলিয়ে সবথেকে ভালো যেই প্রাইস পাওয়া যায়, তার সাথে এন্ট্রি করিয়ে দেয়।

অর্থাৎ, ট্রেডিং এর ধরন অনুসারে এই ধরনের ব্রোকারগুলো কোনওভাবেই নিজ ইচ্ছামতন কারেন্সি পেয়ার এর প্রাইস নির্ধারণ করতে পারেনা। যার কারনে, এই ধরনের ব্রোকারে স্প্রেড এর পরিমাণও হয় অপেক্ষাকৃত অনেক কম।

তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, এরা প্রফিট করে কি করে? যেহেতু স্প্রেড কম তাই এই ব্রোকারগুলো স্প্রেড এর বাইরে, আপনার এন্ট্রিকৃত প্রতিটি ট্রেড থেকে খুবই অল্প পরিমাণ কমিশন চার্জ করে থাকে। কম স্প্রেড এবং অল্প পরিমাণ কমিশন থাকার কারনে ECN ব্রোকারে ট্রেড করার খরচ তুলনামুলকভাবে অনেক কম।

এখন আমরা বর্তমানে যেই প্ল্যাটফর্ম এবং সহজেই ট্রেড করতে পারি সেটির ইতিহাস প্রথম দিকে মোটেও সহজ ছিল না। Forex History জানার প্রয়োজন ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে নেই তারপরও শিখার শেষ কি আছে বলুন? যত বেশী জানবো ততবেশি শিখবো আর এই শিখার জন্য আজকের আর্টিকেলটি।

ফরেক্স এবং রিটেইল ফরেক্স ব্রোকার এর উৎপত্তি এবং এদের পরিচালিত কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সকল ট্রেডারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যথায় কিভাবে ব্রোকার সৃষ্টি হল এবং কিভাবে ব্রোকার কাজ করে, এছাড়াও কিভাবে ব্রোকার আপনার ট্রেড থেকে অর্থ উপার্জন করে সেটির বিস্তারিত তথ্যাদি জানতে পারবেন “Broker 101” ট্রেনিং কোর্স থেকে।


আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।

কপি করুন আমাদের এক্সপার্টদের ট্রেড। জানুন বিস্তারিত

2 কমেন্ট

  1. ফরেক্স ট্রেডিং বাংলাদেশ সরকার বৈধ করেছে কিনা? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো। ব্যাংকগুলো ডুয়েল কারেন্সী কার্ড দিলে ডলার কিনতে ট্রেডাররা এত মূল্য দিতে হতোনা। ব্যাংকগুলো পাসপোর্ট এনডোরসমেন্ট ছাড়া যাতে ডুয়েল কারেন্সী কার্ড সরবরাহ করে এ বিষয়ে আপনাদের কোন চেষ্টা আছে কিনা?

    • ফরেক্স ট্রেডিং সংক্রান্ত বিশেষ কোনও নীতিমালা আমাদের দেশের সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর এখন পর্যন্ত নেই। যেটি আছে, সেটি হচ্ছে অনিবন্ধিত মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়/বিক্রয় অর্থাৎ লেনদেন জনিত একটি নিষেধাজ্ঞা যেটির বিস্তারিত আমাদের “Risk Warning” থেকে জানতে পারবেন। লিংক – https://fxbd.co/risk এছাড়াও, ব্যাংকগুলো এখন ডুয়াল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা প্রদান করে। তবে সেটি পাসপোর্টে এন্ড্রসমেন্ট করা ছাড়া ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নীতিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় করতে হলে অবশ্যই সেটিকে এন্ড্রস করিয়ে নিতে হবে। আসলে এটি সম্পূর্ণরূপেই আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উপর নির্ভরশীল। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আমাদের কিছুই করার নেই। কমেন্ট এর জন্য ধন্যবাদ।

কমেন্ট/প্রশ্ন করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here