স্টক মার্কেটের সাথে ফরেক্স ট্রেডিং এর পার্থক্য

0
228
সর্বশেষ আপডেট: November 5, 2022
You are here:
  • FX Search
  • Forex Trading
  • স্টক মার্কেটের সাথে ফরেক্স ট্রেডিং এর পার্থক্য
প্রত্যাশিত পড়ার সময়: 4 মিনিট

স্টক মার্কেটের সাথে ফরেক্স ট্রেডিং এর পার্থক্য – স্টক মার্কেট কিংবা শেয়ার বাজারে আমাদের মধ্যে অনেকই বিনিয়োগ করে ট্রেডিং করে থাকেন। অনেকেই আছেন যাদের কাছে মনে হয়, ফরেক্স এবং স্টক মার্কেট ট্রেডিং একই ধরনের। বিষয়টি সঠিক নয়। শেয়ার বাজারের সাথে ফরেক্স ট্রেডিং মার্কেটের ব্যাপক আকারের পার্থক্য রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে এই পার্থক্যগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব। এতে করে আপনি বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বুঝতে পারবেন।

শুরুতেই বলে রাখি, আজকের এই আর্টিকেলে মুলত আমরা বাংলাদেশের স্টক মার্কেট কিংবা শেয়ার বাজারের সাথে ফরেক্স মার্কেটের কিছু পার্থক্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

শেয়ার মার্কেট পরিচিতি

শেয়ার মার্কেটে মুলত একজন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের স্টকে নিজের অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং সেই স্টকের মুল্যের পার্থক্য থেকে প্রফিট অর্জন করে থাকেন। এটি পৃথিবীর সকল দেশে একই নিয়মে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের মুল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কিংবা সংক্ষেপে BSEC.

এই সংস্থাটি স্টক মার্কেট পরিচালনার কাজটি করে থাকে। অর্থাৎ, নতুন কোনও প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করার অনুমতি প্রদান, মার্কেটের স্থায়িত্ব বজায় রাখা, মুল্যের অস্বাভাবিক তারতম্য নিয়ন্ত্রণ, ইনসাইডার ট্রেডিং প্রতিরোধ, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান ইত্যাদি। অর্থাৎ, কোনও শেয়ার মার্কেট জনিত যদি কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে সেগুলো সমাধান করার মুল কাজ হচ্ছে এই কমিশনের।

সপ্তাহের ৫দিন (রবি থেকে বৃহস্পতি), সকাল ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ০২ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত আপনি চাইলে শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করতে পারবেন। সহজ কথায় যদি বলি, ট্রেডিং করতে পারবেন। শেয়ার মার্কেট ট্রেডিং এর জন্য আপনার একটি BO Account এর প্রয়োজন হবে। যেটি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে তারপর লেনদেন শুরু করতে পারবেন। স্টক মার্কেটে ট্রেড করার জন্যও আপনাকে নির্দিষ্ট একটি ব্রোকারের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করতে হবে এবং সেই লেনদেন থেকে ব্রোকার কিছু পরিমাণ কমিশন গ্রহন করবে।

মুলত এটি হচ্ছে স্টক মার্কেটে ট্রেডিং করার কিছু প্রাথমিক ধারনা।

বাংলাদেশে ট্রেড করার জন্য দুইটি আলাদা মার্কেট রয়েছে,

  • ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE)
  • চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE)

এই দুইটি স্টক এক্সচেঞ্জের নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যার কারনে, ট্রেডার কোন স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেড করবেন সেটি আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। তবে বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনি চাইলে দুইটি স্টক মার্কেটেই ট্রেডের লেনদেন করতে পারবেন।

বৈশিষ্ট্য সমুহ:

  • BO Account আছে এমন যেকেউ শেয়ারে লেনদেন করতে পারবেন।
  • ইচ্ছামতন বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। কোনও সীমাবদ্ধতা নেই।
  • সপ্তাহের ৫দিন শুধুমাত্র এই ট্রেডিং করা যায়। সপ্তাহিক এবং সরকারী ছুটির দিনগুলোতে শেয়ার মার্কেট বন্ধ থাকে।
  • প্রতিটি ট্রেডে এন্ট্রি গ্রহনের পর সেটি ক্লোজ করার জন্য ৩দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এটিকে বলা হয়, Maturity time. অর্থাৎ, আপনি চাইলেই দিনে গৃহীত এন্ট্রি সেদিনেই ক্লোজ করতে পারবেন না।
  • ট্রেডিং মুলত ব্রোকারের মাধ্যমে করতে হয় এবং বিনিয়োগকারী নিজে ঘরে বসে ট্রেডিং করার সুবিধা পান না।
  • আপনার হয়ে ব্রোকার, ট্রেড করবে এবং সেই ট্রেড থেকে ব্রোকার কমিশন গ্রহন করে অর্থ উপার্জন করবে। এই কমিশন ব্রোকার ভেধে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্রোকার মুলত দুইবার আপনার ট্রেড থেকে কমিশন গ্রহন করে থাকে। প্রথম, যখন আপনি কোনও স্টকে এন্ট্রি গ্রহন করেন এবং দ্বিতীয়, আপনি যখন সেই স্টকটি বাজারে বিক্রয় করে দেন।
  • যেহেতু ব্রোকারই শুধুমাত্র ট্রেড করতে পারে, তাই আপনি শুধু মার্কেট রিসার্চ করার পর, ব্রোকারের এজেন্টকে জানিয়ে দিলে, সেই হিসাবে তিনি নির্দিষ্ট স্টক ক্রয় কিংবা বিক্রয় করবেন।
  • ট্রেডিং এর জন্য ব্রোকার মার্জিনাল লোন এর সুবিধা প্রদান করে তবে এর জন্য ব্রোকার অরিতিক্ত অর্থ চার্জ করে।

মুলত এগুলোই হচ্ছে স্টক মার্কেট কিংবা শেয়ার মার্কেটের বেসিক কিছু বৈশিষ্ট্য। এবার আমরা ফরেক্স মার্কেটের সাথে পরিচিত হব।

ফরেক্স মার্কেট পরিচিতি

ফরক্স মার্কেটে মুলত একজন বিনিয়োগকারী একটি দেশের মুদ্রার বিপরীতে অন্য একটি দেশের মুদ্রা ক্রয় কিংবা বিক্রয় করে থাকে। যেহেতু এখানে দুইটি কারেন্সি বিদ্যমান থাকে তাই এটিকে একত্রে বলা হয় কারেন্সি পেয়ার। এই মার্কেট ব্যবস্থাপনায় আপনি চাইলে দুইভাবেই এন্ট্রি কিংবা পজিশন গ্রহন করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি চাইলে ক্রয় করতে পারবেন কিংবা তাৎক্ষনিক সেটিকে বিক্রয়ও করতে পারবেন। যেটি মুলত স্টক মার্কেটের সাথে ফরেক্স মার্কেটের মুল পার্থক্য।

এই মার্কেট সিস্টেমে আপনি সপ্তাহের ৫দিন (সোম থেকে শুক্রবার), দিনে ২৪ ঘন্টা ট্রেড করার সুবিধা পাবেন। সাধারন স্টক মার্কেটের মতন, এখানেও আপনাকে নির্দিষ্ট একটি ব্রোকারের মাধ্যমে ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে তবে পার্থক্য হচ্ছে, ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড আপনি নিজেই করবেন। অর্থাৎ, স্টক মার্কেটের মতন ব্রোকার সেটি করবে না।

ফরেক্স মার্কেট কারও দারা নিয়ন্ত্রিত হয়না এবং এই মার্কেটের কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাও নেই। এই জন্য এটিকে বলা হয় “Decentralized Market“. মুলত যারা ফরেক্স মার্কেটে ট্রেডিং এর জন্য অংশগ্রহন করেন তাদের গৃহীত পজিশনের ভিত্তিতেও মার্কেটের মুভমেন্ট সংঘঠিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে, বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে, বৃহৎ আকৃতির ব্যাংক, ব্যাক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী।

এই মার্কেটের প্রতিদিন যেই পরিমাণ লেনদেন হয় সেটির সারা পৃথিবীর শেয়ার মার্কেটগুলোর মোট লেনদেনের থেকেও কয়েকগুন বেশী। উধারহন হিসাবে যদি বলি, বিশ্বের সবথেকে বড় শেয়ার মার্কেট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক মার্কেট যেটির প্রতিদিনের লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। প্রক্ষান্তরে ফরেক্স মার্কেটের প্রতিদিন লেনদেন হয় প্রায় ৬.৫ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশী। আশা করছি, ফরেক্স মার্কেটের ব্যাপকতা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পেরেছেন।

বৈশিষ্ট্য সমুহ:

  • যেকোনো ব্রোকারে রিয়েল ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করার মাধ্যমেই ট্রেড শুরু করা সম্ভব।
  • ইচ্ছামতন বিনিয়োগ করার সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধাটি মুলত ব্রোকারের উপর নির্ভর করে। সর্বনিম্ন ১ ডলার থেকে শুরু করে আপনার ইচ্ছামতন যেকোনো পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবেন।
  • সপ্তাহের ৫দিন (সোম থেকে শুক্রবার), দিনে ২৪ ঘন্টা ট্রেড করার সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, যেই ৫দিন ফরেক্স মার্কেট ওপেন থাকে, এই সময় মার্কেট বন্ধ হয়না।
  • তাৎক্ষনিক এন্ট্রি গ্রহন এবং সেটি ক্লোজ করতে পারবেন। আপনাকে এন্ট্রি নিয়ে অপেক্ষা করতে হবেনা।
  • ব্রোকারে রিয়েল ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করার পর, ফান্ড বিনিয়োগ করে ঘরে বসেই আপনি ট্রেড করতে পারবেন। এমনকি যদি আপনার কাছে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেড করা যায়।
  • আপনার গৃহীত ট্রেডের এন্ট্রি থেকে ব্রোকার প্রফিট করে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি যেই এন্ট্রি নিবেন সেটির থেকে ব্রোকার কমিশন পাবে। ফরেক্স ট্রেডিং এর ভাষায় এটিকে বলা হয় “স্প্রেড”। এই স্প্রেড ব্রোকার শুধুমাত্র ১বার চার্জ করতে পারবে।
  • “নিজেই নিজের বস”! নিজেকে ট্রেড করতে হয় বিধায়, কারও কাছে যেতে হবেনা এমনকি ইচ্ছামতন যেকোনো সময়ে ট্রেড করতে পারবেন।
  • অল্প পরিমাণ ফান্ড ডিপোজিট করেও, লিভারেজ সুবিধা ব্যবহার করার মাধ্যমে বড় আকারের এন্ট্রি গ্রহন করার সুবিধা পাবেন।

মুলত এগুলোই হচ্ছে ফরেক্স মার্কেট কিংবা কারেন্সি মার্কেটের বেসিক কিছু বৈশিষ্ট্য। এবার আমরা এই দুই মার্কেটের মধ্যকার মেজর পার্থক্যগুলো জানার চেষ্টা করবো।

ফরেক্স Vs. স্টক মার্কেট

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফরেক্স এবং স্টক মার্কেটের বেসিক পরিচিতি এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম। এখন সময় হয়েছে এদের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্থক্য সম্পর্কে জানার। যেটি আপনার ট্রেডিং জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে সহায়তা করবে।

সুবিধার নাম স্টক মার্কেট ফরেক্স মার্কেট
নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই
ট্রেডিং এর সময় সপ্তাহের ৫দিন (নির্দিষ্ট সময়) সপ্তাহের ৫দিন (২৪ ঘণ্টা)
ট্রেডিং এসেট নিবন্ধিত কম্পানির শেয়ার কারেন্সি, স্টক, ইক্যুইটি
দৈনিক লেনদেন ১০-১১ হাজার কোটি টাকা ৬.৫ ট্রিলিয়ন ডলার
নিজ ট্রেডিং সম্ভব নয় নিজেকেই ট্রেড করতে হয়
অনলাইন ট্রেডিং সম্ভব নয় অনলাইনেই ট্রেড করতে হয়
কমিশন দুইবার কমিশন দিতে হয় স্প্রেড ব্যাতিত কোনও চার্জ নেই
ট্রেড ক্লোজিং ৩দিন সময় দিতে হয় মিলি সেকেন্ডের মধ্যে ক্লোজিং
বিনিয়োগের পরিমাণ স্টকের পরিমানের উপর নির্ভরশীল ১ ডলার থেকে আপনার যত ইচ্ছা
ট্রেডিং প্যাটার্ন শুধুমাত্র ১দিকেই ট্রেড করা যায়।
BUY করা যায় মাত্র
২দিকেই ট্রেড করা যায়।
BUY এবং SELL
ট্রেডিং সিস্টেম আপনার হয়ে ব্রোকার ট্রেড করবে আপনি নিজেই ট্রেড করবেন
ট্রেডিং নীতিমালা বাধ্যবাধকতা রয়েছে যা ইচ্ছা করুন
মার্কেট নিয়ন্ত্রণ বড় বড় বিনিয়োগকারীরা চাইলে
মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মার্কেট নিয়ন্ত্রণ কারও
পক্ষেই সম্ভব নয়।
অনলাইন ট্রেডিং সম্ভব নয় অনলাইনেই ট্রেড করতে হয়
কমিশন দুইবার কমিশন দিতে হয় স্প্রেড ব্যাতিত কোনও চার্জ নেই
ট্রেডিং প্যাটার্ন দীর্ঘ মেয়াদের ট্রেড করতে হয় আপনার ইচ্ছা অনুসারে ট্রেড
ট্রেডিং স্ট্রেটিজি এই মার্কেটের কোনও স্ট্রেটিজি নেই।
ট্রেড করাই হচ্ছে স্ট্রেটিজি
টেকনিক্যাল, ফান্ডামেন্টাল
এবং সেন্টিমেন্টাল এনালাইসিস
গুজব গুজব বড় একটি ফ্যাক্টর গুজব এখানে কাজ করেনা

আশা করছি, উপরের এই টেবিলের থেকে ফরেক্স এবং স্টক মার্কেটের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। এই টেবিলটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, বিনিয়োগ করার জন্য কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে।


আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত বিশেষ কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন। প্রতিদিনের আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রহনের জন্য, নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিউটোরিয়াল দেখার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। এছাড়াও, যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেইসবুক এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে। এছারাও ট্রেড শিখার জন্য জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষায়িত অনলাইন ট্রেনিং পোর্টাল।

কপি করুন আমাদের এক্সপার্টদের ট্রেড। জানুন বিস্তারিত

আরটিকেল সম্পর্কে মতামত
খারাপ 0 9 of 9 found this article helpful.
Views: 251

কমেন্ট/প্রশ্ন করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here